আইন নিয়ে কেন পড়বেন ?
👉 ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশলসহ হরেক রকমের বিষয় আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। সাধারণত অভিভাবকরা চান, ছেলে-মেয়ে যেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়। তবে আজ আমরা কথা বলবো কেন আপনি আইন বিভাগ নিয়ে পড়বেন। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক অর্পিতা শামস মিজান।
দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই আইন বিভাগ রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কোর্স পড়ানো হয়। তবে সার্বিকভাবে আইন পড়তে হলে কিছু বিষয় একজনকে জানতেই হবে। এর মধ্যে অন্যতম ‘জুরিসপ্রুডেনস’, যা একাধারে আইনের বিজ্ঞান, দর্শন ও ব্যাকরণ। আইনের প্রাথমিক ধারণাগুলো এখানে আলোচনা করা হয়। তা ছাড়া পড়ানো হয় সাংবিধানিক আইন, যা ছাড়া আমরা এ দেশের আইনগুলো বুঝতেই পারব না। বাংলাদেশে পারিবারিক আইনগুলোতে ধর্মীয় আইনের যে গভীর প্রভাব রয়েছে, তা আমরা বুঝি মুসলিম ও হিন্দু আইন পড়তে গেলে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে কী কী আইন মেনে চলতে হবে, তা পড়ানো হয় আন্তর্জাতিক আইনে।
তাছাড়া স্নাতক পর্যায়ে ভূমি আইন, ক্রয়বিক্রয়–সংক্রান্ত আইন, পরিবেশ আইন, ক্রিমিনোলজি, সিপিসি, সিআরপিসি ইত্যাদি সবখানেই পড়ানো হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আরও কিছু বিশেষায়িত বিষয় পড়ানো হয়।
👉ক্যারিয়ার গড়তে: আইনের সঠিক বিকাশ হয়নি বলে মানুষ এখনো কয়েকটি প্রথাগত ক্ষেত্রেই ভবিষ্যৎ গড়ার কথা ভাবে— আদালতে ওকালতি, বিচারক কিংবা শিক্ষক। তবে এর বাইরে আরও অনেক অনেক কাজ সম্ভব। যেমন আইন পড়ে গবেষকও হওয়া যায়। গবেষণা যে শুধু আইনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয়। সমাজবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, অর্থনীতি, মেডিকেল সায়েন্স সবকিছুর সঙ্গেই আইন নিয়ে গবেষণা সম্ভব। এ কারণে আইনকে আন্তগবেষণা ক্ষেত্রও বলা যায়। পৃথিবী যতই এগিয়ে যাক না কেন, আইন পেশার গুরুত্ব সব সময় থাকবে।
আইনজীবী হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা তো আছেই। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা যেসব চাকরিতে আবেদনের যোগ্য, আইনের শিক্ষার্থীরাও সেই সব পদে অনায়াসে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। ‘জুডিশিয়াল সার্ভিস’ অর্থাৎ সহকারী জজ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ‘সরকারি ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার’ হওয়ার সুযোগ আছে, যা শুধু আইনের শিক্ষার্থীদের জন্যই। বিসিএসে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস ইত্যাদি নন-টেকনিক্যাল ক্যাডারে যোগ দিতে পারবেন।
দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষকের চাহিদা আছে। কমিশনড অফিসার পদমর্যাদায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ‘জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল’ হিসেবে যোগ দেওয়া যায়। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘সহকারী আইনসচিব’ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার কথাও ভাবতে পারেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাস, ব্যাংক ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে ‘ল অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যায়। আদালতে সরকারি আইন কর্মকর্তা বা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ হয়। বিদেশে ইমিগ্রেশন কেস অফিসার বা ল অফিসার হিসেবে কাজ করেন অনেকে। আইনের ডিগ্রিধারীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা—যেমন ইউএনএইচসিআর, ইউএনডিপি, ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ, আইওএম, আইএলও ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন